ঢাকাSunday , 19 May 2024
  • অন্যান্য

আশুলিয়ায় দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, গাড়ি ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২, ২০২৩ ১২:১৩ অপরাহ্ণ । ৯৩ জন
link Copied

নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পঞ্চম দিনে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় দুটি কারখানায় ভাংচুর করেছে বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা। এসময় কারখানার গ্যারেজে রাখা একটি প্রাইভেট কার ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ভাংচুর করে তারা।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া উত্তরপাড়া এলাকায় অবস্থিত ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ও নাসা গ্রুপের সাইন অ্যাপারেলস কারখানায় এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১০ টার পর হঠাৎ পার্শ্ববর্তী আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের আর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড কারখানায় হামলা চালায়। এসময় তারা সেখানকার শ্রমিকদের বের করে নিয়ে যায় এবং কারখাটির গ্যারেজে পার্কিং করে রাখা একটি প্রাইভেটকার ও নোয়া মাইক্রোবাসে ভাংচুর চালায়।

খবর পেয়ে শিল্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের চেষ্টা করলে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের কোম্পানি সচিব আরএকে লিটন বলেন, সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কারখানায় কাজ চলছিল। সকাল ১০ টার পর পার্শ্ববর্তী আগামী অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা হঠাৎ বের হয়ে এসে আমাদের কারখানায় হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে যায়। এঘটনায় আজকের জন্য কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, বেলা ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়ার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো ছিলো। সোয়া ১২টার দিকে কাঠগড়া আমতলা এলাকায় কয়েকটি কারখানার ২-৩ হাজার শ্রমিক হঠাৎ একত্রিত হয়ে নাসা গ্রুপের সাইন অ্যাপারেলস কারখানায় ভাংচুর চালায়। এসময় শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে কারখানার গ্লাস ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এর আগে সকাল থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশে অবস্থিত কিছু কারখানা ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ রয়েছে। কাঠগড়া এলাকার ঘটনা দুটি ছাড়া গত কয়েকদিনের তুলনায় আশুলিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানায় আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে নোটিশ দিয়েছে। আজও ছয়টি কারখানার শ্রমিকেরা সকালে কাজে যোগদান করেছিলো। ঘণ্টাখানেক কাজ করার পর তাঁরা কারখানা থেকে বের হয়ে যায়।

শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন পয়েন্টে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলকামানসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তাদের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে এপিসিসহ (আর্মর্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা ৩০ থেকে ৩৫টি পোশাক কারখানার ছুটির নোটিশ পেয়েছি। কিছু কারখানায় সকালে কাজ শুরু হলেও পরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেছিলেন, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এছাড়া যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি নিয়মিত বিজিবি টহল কার্যক্রম চলমান আছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব করলে পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও শ্রমিক অসস্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

ওএফ/এসআর