ঢাকাSaturday , 18 May 2024
  • অন্যান্য

আন্দোলন হলে পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে: বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৩১, ২০২৩ ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ । ৮৮ জন
link Copied

ন্যূনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের নামে কোনো তৈরি পোশাক কারখানা ভাঙচুর করা হলে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে উদ্ভূত শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে বয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।

এ সময় এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম এবং এস এম মান্নান কচিসহ পোশাক খাতের মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নভেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম নতুন মজুরি চূড়ান্ত করা হবে। যা আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু এখন অহেতুক আন্দোলনের নামে কারখানায় হামলা বা ভাঙচুর করা হচ্ছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য বহিরাগতরা উস্কানি দিচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এরই মধ্যে দুজন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কারখানা নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানার মালিকরা শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধ করতে পারবেন। কারখানা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে শ্রমিকরা কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাবেন না।

শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্ন জবাবে ফারুক হাসান বলেন, মজুরি নিয়ে সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত দেবে মালিকরা তার বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রতিমুহূর্তে শিল্পাঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন মালিকরা।

জানা গেছে, মজুরি বোর্ডে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরির প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষে ২৩ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়। আগামীকাল বুধবার আবারও নতুন করে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা প্রস্তাব জমা দেবে। নভেম্বরের মধ্যেই বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হবে যা কার্যকর হবে ১ ডিসেম্বর থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশে ফরেন রিজার্ভে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেই এতসব ঘটনার পরও ধৈর্য সহকারে কারখানা চালু রেখেছেন, রাখছেন এবং সব সময়ে কারখানা চালু রাখার প্রত্যয় নিয়ে একনিষ্ঠভাবে পরিশ্রম করছেন। তখন কোনাবাড়ি এলাকায় বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনা মালিকদের সব প্রচেষ্টা হতোদ্যম করে দেয়।

গত ২৬ আগস্ট এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড ছুটি দেওয়ার ৩ ঘণ্টা পর বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী কারখানা ভাঙচুর করে। গতকাল দুপুর ১২টায় কারখানা ছুটি দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী হাতুড়ি, শাবল দিয়ে প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে প্রায় দুই ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় এবং কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কারখানার বাটন অপারেটর মো. ইমরান মারা যান।

তিনি বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মালিকদের জানাতে চাই, দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, তবে মালিকরা ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।

আজকের এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রতি অনুরোধ, পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা প্রদান করুন, এলাকায় সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করুন, সর্বোপরি জানমালের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তবে এতে কোনো প্রিয় শ্রমিক ভাইবোন বা কর্মচারী এবং মালিক যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল আছি বর্তমানে আন্তর্জাতিক কারণে স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনরা কতখানি কষ্টে আছেন। তাদের এ কষ্টে আমরা প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যাথী। সেই সঙ্গে এটিও উপলব্ধি করেছি, শিল্প যত সমস্যায়ই থাকুক না কেন, পোশাক পরিবারের সদস্য, প্রতিটি শ্রমিক ভাইবোনদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা আমাদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, কারখানার শ্রমিকটা কিন্তু আন্দোলন করছেন না। আন্দোলন করছে বহিরাগতরা। এটি রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার তরিকাও হতে পারে। সবার উচিত পোশাক খাতকে রক্ষা করা। কারণ এর নির্ভর করছে দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যত।

এ সময় শ্রমিকরা যাতে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয় সেই আহ্বান জানান তিনি।

এসআর