তারকারাজি যেমন আকাশকে আলোকিত করে মানুষকে মুগ্ধ করে তেমনি সৎ, ন্যায়পরায়ণ রাজনীতিবিদও জাতির আশা – আকাঙ্ক্ষার প্রতীক জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্বের দরবারে জাতিকে আলোকিত করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে তারকা ব্যবসায়ী, খেলার মাঠের তারকা আর চলচ্চিত্রের তারকারা তাঁদের জৌঁতিময় স্ব স্ব পেশা ছেড়ে এমপি হওয়ার খায়েশে ঘোড়দৌড় রেসে অংশগ্রহণ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ট্রান্সপোরেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর তথ্যানুযায়ী গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতাংশের হিসাবে ৬১ শতাংশ ছিল তারকা ব্যবসায়ী, ১৫ শতাংশ আইনজীবী এবং মাত্র ৫ শতাংশ ছিল মাঠের রাজনীতিবিদ। এই তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এটা শৃঙ্খলিত সৌন্দর্যময় গণতন্ত্র ও রাজনীতিবিদদের জন্য অশনিসংকেত।
একজন রাজনীতিবিদ পরিবার পরিজনকে সময় না দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মাঠে ময়দানে দিনরাত সংগ্রাম করে জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করে জনগণের ভালবাসা অর্জন করে এবং জনগণ তাঁদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব দিতে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইদানীং রাজনীতির মাঠ পোড় খাওয়া, ত্যাগী রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত অন্যান্য পেশার মানুষরা দখলে নিয়ে নিচ্ছে। আর এইজন্য ক্ষমতালোভী শীর্ষ রাজনীতিবিদরাই দায়ী।
রাজনীতিবিদদের হাত থেকে রাজনীতি হাতছাড়া হয়ে গেলে আগামীতে গণতন্ত্র যেমন হোঁচট খাবে তেমনি রাজনৈতিক কর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে রাজপথের ত্যাগী রাজনীতিবিদরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা যাবে। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সংকট দেখা যাবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শিতা সম্পন্ন নেতৃত্ব সংকটের ফলে রাষ্ট্রের উপর ভর করবে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসক ও আজ্ঞাবাহক প্রশাসনযন্ত্র। এতে ভুলণ্ডিত হবে জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে বাসা বাঁধবে দূর্নীতি। যা এখনই আমাদের দেশে দৃশ্যমান।
পরিশেষে বলবো, ‘ বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর তেমনি রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মাঠেই সুন্দর ‘। মাঠের তারকা, তারকা ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতির পরিমন্ডলে বিচরণরত তারকারা তাঁদের তারকারাজ্যে বিচরণ করে রাষ্ট্রকে আলোকিত করতে পারে। মাঠের রাজনীতি আলোকিত করবে রাজনীতিবিদরাই।
সুতরাং, আমাদের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ — কোন তারকা নই, রাজপথের ত্যাগী নির্যাতিত নেতা – কর্মীদের আগেই অগ্রাধিকার দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে জাতীয় সংসদে মনোনয়ন করুন। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতি বিমুখ করে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মেরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে বিলিয়ে দিবেন না।
লেখক ও সাংবাদিক
আবদুর রহিম
rahimmalekctg@gmail