আব্দুস সোবহান, বয়স ৬৩, সাদা রঙ ধারণ করেছে মাথার সবকটি চুল। মুখভর্তি দাড়িরও একই অবস্থা। পরিবার নিয়ে দু’মুঠো খাবারের জন্য বৃদ্ধ বয়সেও ভাঙছেন ইট। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত করেন এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম।
জীবনযুদ্ধে পরাজয় মানতে নারাজ ৬৩ বয়সী আব্দুস সোবহান। প্রতিদিন সকালে মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভাঙছেন ইট। দুমুঠো খাবার জোগাতে হাতুড়ি নিয়ে সংগ্রাম চলছে প্রতিটি সেকেন্ড। কিন্তু ইট ভাঙার আয়ে এখন আর সংসার চলেনা আব্দুস সোবহানের, চানসরকারি সাহায্য।
টানা ২৭ বছর ধরে ইটভাঙার কাজ করছেন এই জীবনযোদ্ধা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু করেন ইট ভাঙার কাজ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ইট ভেঙে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয় আব্দুস সোবহানের।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে খারুয়া ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক। স্ত্রী রোকেয়া আক্তারসহ ৭ জনের সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।বৃদ্ধ বয়সেও তাকে সকাল-বিকাল করতে হয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম।
আঃ সোবহানের বাড়ির ভিটেমাটি বলতে মাত্র ৪ শতক জমি। বর্তমানে বাড়ির যে জমিটুকু আছে সেখানেই দুচালা টিনের একটি ঘর। ভাঙা বেড়া, বর্ষাকালে যেন ঘরের ভিতর পানি না পড়ে সেজন্য টিনের চালে পলিথিন মোড়ানো।
প্রতিদিন সকালে একটি হাতুরি ও ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হন আঃ সোবহান।সারাদিন কাজ করে তিনি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা রোজগার করেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় । এই আয় দিয়েই কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
ইট ভাঙতে ভাঙতে আব্দুস সোবহান বলেন, ‘পৃথিবীতে আইছি বাবা ইট ভাঙার কাজ লইয়া। মরার আগে ইট ভাঙার চাকরি শেষ হইবো না। জীবনডাই পার করলাম ইট ভাঙতে ভাঙতে। ইটে হাতুড়ির ঘা বসানোর সময় কখনও কখনও নিজের হাতেও লেগেও যায়। এতে অসহ্য যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়ে থাকেন মাঝে মধ্যে। তবুও সন্তানদের নিয়ে পরিবারের অভাবের কথা চিন্তা করে হাতুড়িকেই জীবিকার একমাত্র অবলম্বন করে নিয়েছেন তারা।
এই বয়সে কঠোর পরিশ্রমের কথা জানতে চাইলে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বৃদ্ধ আঃ সোবহান বলেন,২৭ বছর ধরে ইট ভাঙছি। একদিন ইট না ভাঙলে উপাস থাকতে হয়। এখন বেশি খোয়া ভাঙতে পারিনা। বুড়া মানুষ। শরীর আর চলে না। ইট ভেঙে যে আয় হয় তা দিয়াই কোনমতে চলি। এখন জিনিসের যে দাম তাতে আর চলার পথ নাই।
আঃ সোবহানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন কেঁদে কেঁদে বলেন,খুব কষ্টে আছি বাবা। অভাবের সংসার। স্বামী ও ছেলেমেয়ে লইয়া ঠিকমত খাইতারিনা। আমি অসুখে ভোগতাছি। টাকার অভাবে ওষুধ আনতারিনা।
তিনি বলেন, আমার স্বামী জীবন কাটাইলো ইট ভাইঙ্গায়। অহন অসুখ শরীর,আগের মতো কাজ করতারেনা।কাজ করলে খাই, নাইলে উবাস থাহি। আমি একটু সাহায্য চাই। সরকার যদি আমরারে একটু সাহায্য করতো। একটা ঘর কইরা দিতো।