ঢাকার সাভারে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পুত্রসহ দুই স্কুল শিক্ষার্থীকে হত্যার চেষ্টা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান।
রবিবার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, এখন পর্যন্ত ৪ জন আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোর গ্যাংটির নাম “ভাই-ব্রাদার্স”। কিশোর গ্যাং টিম “ভাই-ব্রাদার্স”গ্রুপের লিডার মো. আব্দুল লতিফ।
আহতরা দৈনিক যুগান্তরের সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান ভান্ডারীর পুত্র জিসান প্রামাণিক (১৫), ও সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার কামরুল হোসেনের পুত্র সিয়াম রাজা (১৫)।
এদের মধ্যে জিসান প্রামাণিক বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর সিয়াম রাজা কলমা ওয়াজ আলী মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হামলাকারীরা সবাই কিশোর গ্যাং “ভাই-ব্রাদার”গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় জড়িত সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া মডেল কলেজ রোড এলাকার মো: মোস্তফার ছেলে ও কিশোর গ্যাং “ভাই-ব্রাদার”গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফ (২১) সহ গ্রুপের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, শাহীবাগ চৌরাস্তা এলাকার মো. ইয়াছিন খানের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহান খান(১৬), চাপাইন-সিআরপি এলাকার মো. মাসুদ প্রধানের ছেলে মো: ছাদিক হাসান মুনতাসির (১৫), শাহীবাগ এলাকার মো: আব্দুল্লাহ’র ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৯)।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সুদীপ কুমার গোপ জানান, বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, কিশোর গ্যাং “ভাই-ব্রাদার”গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফ স্কুল শিক্ষার্থী জিসান প্রামানিককে তার অনুসারী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বখাটে লতিফের কথা না শুনায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দের জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের লিডারের নেতৃত্বে জিসানকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা। এসময় তাকে বাঁচাতে ছাদিক হাসান এগিয়ে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
আহত জিসানের বাবা সাংবাদিক মতিউর রহমান বলেন, “প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের সাফারি পার্কে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজনে গিয়েছিলো বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেসময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বাসে ওঠা নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িকভাবে মিমাংসা করা হয়৷ বিষয়টি জানার পর আমি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পাশাপাশি পরবর্তীতে যেন আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই।”
মামলা সূত্রে জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় আহত স্কুল শিক্ষার্থী জিসানকে তার বন্ধু সিয়ামের মাধ্যমে সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সাভার পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে অতর্কিত হত্যা চেষ্টা করে কিশোর গ্যাং “ভাই-ব্রাদার”গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে প্রায় ১৯ জন কিশোর গ্যাং সদস্য। এঘটনায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম রাজাও কিশোর গ্যাংয়ের দ্বারা ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হওয়ায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করে স্থানীয়রা। আহত দুই শিক্ষার্থীর একাধিক স্থানে অস্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে সাভার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকবার আলী খান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার ৫ ঘণ্টার মধ্যে মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে প্রাপ্তবয়স্ক দুইজনকে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে আরো যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।