সরকার নির্ধারিত নিত্য প্রয়োজনীয় ২৯ টি পণ্যের দাম বেধে দেওয়ার পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাজারগুলোতে মিলছে না সেই দামে কোন পণ্য। উল্টো কিছু কিছু পণ্যের মূল্য আগের দামের থেকে আরও কিছুটা বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে, এই দামে পণ্য বিক্রি না করলে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মাফিক দামে পণ্য বিক্রি করছে বিক্রেতারা।সাধারণ ভোক্তাদের অভিযোগ, শুধু কাগজে-কলমেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, বাজারে এর কোন প্রতিফলন নেই। পাশাপাশি বাজারে মনিটরিং না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রবিবার সরজমিনে কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ কাঁচাবাজার, জিনজিরা কাঁচাবাজার আগানগর বাবুবাজার ব্রিজের নিচের কাঁচাবাজার,হাসনাবাদ কাঁচাবাজার, ইকুরিয়া মোড় কাঁচাবাজার, আব্দুল্লাহপুর কাঁচাবাজার, কোনাখোলা কাঁচাবাজার, রুহিতপুর কাঁচাবাজার,কলাতিয়া কাঁচাবাজার, আটি কাঁচাবাজার, খোলামোড়া কাঁচা বাজার সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা অস্থায়ী বাজার সমূহ ঘুরে দেখা গেছে কোথায়ও সরকার নির্ধারিত ২৯ টি পণ্য প্রজ্ঞাপনের দাম অনুযায়ী মিলছে না।
এ সমস্ত বাজারে বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে,যদিও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কথা রয়েছে। এছাড়াও ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতিপিস ৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ প্রকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০ টাকা,ক্যাঙ্গারু মুসুর ডাল ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কালিগঞ্জবাজার আতাউর ম্যানশনের সামনের কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা একটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান,গত দুদিন আগেও আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে উল্টো আরো পাঁচ টাকা করে কেজিতে বেড়ে গেছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজস্ব উদ্যোগে বাজার মনিটরিং করলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। তাছাড়া খুচরা নয় পাইকারি বাজার আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাহলে অটোমেটিক খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে।
এই বাজারের কাঁচা তরকারি বিক্রেতা ইমরান হোসেন জানান,আমরা ৩৪ টাকা কেজি দরে আড়ত থেকে ক্যাশ ম্যামোর মাধ্যমে আলু ক্রয় করেছি। এরপরে পরিবহন খরচ দিয়ে প্রায় ৩৬ টাকায় কেজি আলু কেনা পড়েছে।এখন ৪০ টাকার কমে আমরা কিভাবে বিক্রি করব।
জিনজিরা কাঁচাবাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আলী হোসেন জানান,হাটে গরুর দাম অনেক বেশি,৭৫০ টাকার নিচে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব না। অন্যান্য অনেকেই কম দামে কিভাবে মাংস বিক্রি করছে,এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কে কি করছে সেটা জানিনা। ৭৫০ টাকার কম আমি বিক্রি করতে পারবো না।
তবে ফার্মের সাদা ডিম নির্ধারিত সাড়ে দশ টাকা পিস ও ছোলা বুট ৯৮ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যে ২৯ টি পণ্যের দাম বেধে দিয়েছে সেটা কার্যকর করতে সরকারি মনিটরিং এর দরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই। কৃষি বিপণন মনিটরিং কমিটি ও ভোক্তা অধিকার সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা মিলে খুব দ্রুতই বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রিয়াদ জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক ২৯ টি পণ্যের মূল্য কার্যকর করতে দুই একদিনের মধ্যেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না।