ঢাকাSaturday , 27 July 2024
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাত্র ২৪ ঘন্টায় হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল সখিপুর থানা পুলিশ

মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ । ৪৭৮ জন
link Copied

টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার তক্তার চালা উখিয়ারচালা নিবাসী আরফান আলী (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী সকল আসামীদের হত্যা মামলা রুজূর মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন সখিপুর থানা পুলিশ।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২৩ সনের ৩ সেপ্টেম্বর সখিপুর উপজেলার তক্তার চালা এলাকার উখিয়ার চালা গ্রামের মরহুম কোরবান আলীর পুত্র আরফান আলী (৫৫) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশের কোন এক চায়ের দোকানে। তিনি চা খেয়ে আর বাড়ি ফেরেননি, তার স্ত্রী সন্তানসহ নিকট আত্মীয় স্বজনরা তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকেন। পরদিন ভোর সকালে আরফান আলীর বাড়ির মাত্র ১০০ গজ দুরেই একটি ঝোপের আড়ালে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় এক কাঠমিস্ত্রী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত লোকজন ছুটে আসেন লাশ দেখতে। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক সখীপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ ছুটে যান ঘটনাস্থলে। পুলিশ আরফান আলীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশটি উদ্ধার করে এনে টাঙ্গাইল হাসপাতাল মর্গে পাঠান লাশের ময়নাতদন্তের জন্য। কিন্তু মৃত আরফান আলীর বাড়ির লোকজন মনে করেছিলেন এটা হৃদয়যন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। কারণ মৃত আরফান আলী পূর্ব থেকেই একজন হার্টের রোগী ছিলেন। তাই মৃত আরফান আলীর আত্মীয় স্বজনসহ গ্রামবাসীর ধারণাও ছিলো এটি নিছক হার্টঅ্যাটাক জনিত মৃত্যু। আর এ কারণেই সখিপুর থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে রেখেছিলেন। কিন্তু বাঁধ সাধেন দীর্ঘ প্রায় তিনমাস পরে মৃত আরফান আলীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, মৃত আরফান আলীর মৃত্যুটি হয়েছিল শ্বাসরোধের কারণে। আর এমন রিপোর্ট পুলিশ হাতে পেয়েই নড়েচড়ে বসেন। দ্রুত সখিপুর থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমানের নির্দেশে ৪ ফেব্রুয়ারী অপমৃত্যুর মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করে এসআই মনিরুজ্জামানকে হত্যা রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেয়া হয়। চৌকস এসআই দ্রুত গোয়েন্দা সহযোগিতায় নেমে পড়েন মাঠে। তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সহযোগিতায় মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই খুঁজে পান আরফান আলী হত্যার ক্লো। পুলিশের জালে আটকে পড়েন আরফান আলী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও আসামি মোসাঃ নাছিমা বেগম (৪০)। এরপর তার দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্য মোতাবেক একে একে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হন হত্যাকারী সকল আসামীদের।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন- (১) নাছিমা বেগম (৪০) পিতা নছিম উদ্দিন, গ্রাম উখিয়া চালা, (২) আলম মিয়া, (১ নং আসামি নাছিমা বেগমের সহোদর ভাই) পিতা- নছিম উদ্দিন, (৩) ছালেহা বেগম (৪২) স্বামী-আলম মিয়া, (নাছিমা বেগমের ভাই বৌ), (৪)আমিনুর রহমান ওরফে স্বপন (৩০), পিতা-মোহাম্মদ আলী সাং হতেয়া রাজাবাড়ি, সর্ব থানা ও উপজেলা সখিপুর, জেলা টাঙ্গাইল।

হত্যাকান্ডের বিবরণে হত্যাকারী আসামীদের দেয়া স্বীকারোক্তি সূত্রে পুলিশ জানান, মৃত আরফান আলীর সাথে মূল আসামী নাছিমা বেগমের দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল, হত্যাকান্ড ঘটানোর দিন ৩ সেপ্টেম্বর নাছিমা বেগম তার স্বামী বাড়ি চতল বাইদ গ্রাম থেকে নিজ বাড়িতে এসে আরফান আলীকে ফোন করে তার সাথে দেখা করার জন্য। ওইদিন রাত আনুমানিক ১০ টার কিছু পরে আরফান আলী নাছিমা বেগমের সাথে দেখা করতে তাদের বাড়িতে গেলে সকল নামীয় হত্যাকারী আসামি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আরফান আলীকে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে কেউ যেন তাদের এ হত্যাকান্ডের ঘটনা বুঝতে না পারেন, সে উদ্দেশ্যেই মূলত মৃত আরফান আলীর লাশটি আরফান আলীর বাড়ির অদুরে একটি ঝোপের আড়ালে অতি গোপনে গভীর রাতে ফেলে আসে তারা।

এ বিষয়ে সখিপুর থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, আমি অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করছি যে, হত্যা মামলাটি রুজু করার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আমাদের দায়িত্বরত পুলিশ ও গোয়েন্দারা হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ সকল হত্যাকারী আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আমাদের পুলিশকে নিয়ে আমি গর্বিত এবং বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সকল আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আজ ৫ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।