ঢাকাMonday , 29 April 2024
  • অন্যান্য

জয়পুরহাটে কৃষকের গলার কাঁটা এখন বেগুণ, শসা ও করলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ । ২২ জন
link Copied

খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটে কৃষকের গলার কাঁটা এখন বেগুণ, শসা ও করলা। বাজারে এই ফসলগুলোর দাম এখন এতই কম যে বিক্রি করে হাটের খাজনা ও ভ্যান ভাড়া উঠছে না। ফলে চরম লোকসানের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন জেলার কৃষকরা।

জেলা শহরের নতুনহাট পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য ফসলের দাম কিছুটা পাওয়া গেলেও বেগুণ, শসা, করলা এখন গলার কাঁটা। পাইকারি নতুনহাটে পাঁচবিবি উপজেলার কাঁশড়া গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে আসা কৃষক দিলিপ কুমারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এবার উন্নত মানের নবাব জাতের করলা চাষ করেছেন ২৫ শতাংশ জমিতে। সেই করলা এনে পাইকারি বিক্রি করেন ৫শ টাকা মণ। যা কেজি হচ্ছে সাড়ে ১২ টাকা। খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সেই করলা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি।

সদর উপজেলার চকমোহন গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এক মণ বেগুণ পাইকারি বিক্রি করেন ৮০ টাকা। বাড়ি থেকে হাটে আসা ভ্যান ভাড়া ৬০ টাকা এবং হাটের খাজনা দিতে হয়েছে ২০ টাকা। নিজের শ্রমের কোন দামই নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

শহিদুল হাটে আর বেগুণ নিয়ে আসবে না বলে এ প্রতিনিধিকে জানায়।

ধারকী চৌধুরী পাড়ার মফিজুল ইসলাম জানান, এবার ১৫ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন। নতুন হাটে একমণ শসা বিক্রি করেন ২০০ টাকা। যা কেজি হিসেবে পড়ে ৫ টাকা। খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।

দোগাছী ইউনিয়নের চকভারুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, শসা বিক্রি করে পুরো লোকসান গুনতে হচ্ছে। লেবার, পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়লেও বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে শসা বাজারে নিয়ে গেলে ভ্যান ভাড়াও উঠছে না বলে মন্তব্য করেন কৃষক শহিদুল ও আব্দুল লতিফ।

বর্তমানে পাইকারি বাজারে পটলও প্রতিমণ ৫৬০ টাকা বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা লোকসান গুনছেন বলে জানান, পটল চাষী বিষ্ণুপুর গ্রামের এনামুল হক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে শাক সবজি চাষের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষকরা। জেলায় এবার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জয়পুরহাটে চাষ হওয়া উল্লেখযোগ্য শাক সবজির গুলোর মধ্যে রয়েছে করলা, শসা, বেগুণ, ঢেঁড়শ, টমেটো, লালশাক, পুঁইশাক, জগন্নাত শাক, সবুজশাক, ডাটা, পালং শাক, সিম, বরবটি, লাউ, পেঁপে, গাজর, সিম, ধনিয়া পাতা ইত্যাদি। শাক সবজি চাষের উপজেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদরে ২ হাজার হেক্টর, পাঁচবিবিতে ২ হাজার ১০ হেক্টর, আক্কেলপুরে ৪ শ ৩০ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৩ শ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ২ শ ৬০ হেক্টর জমি। জয়পুরহাট জেলার হাট বাজার গুলোতে করোলা, শসা ও বেগুণের অতিরিক্ত আমদানি হওয়ার কারনে দাম কমেছে বলে মন্তব্য করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন।

এসআইএস/এসআর