ঢাকাMonday , 20 May 2024
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জাবি ও পাশ্ববর্তী এলাকার ত্রাস কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক ছাত্রলীগ নেতা সময়

বাংলা ডেস্ক
মার্চ ৭, ২০২৪ ১০:২৬ অপরাহ্ণ । ৬৪ জন
link Copied

সাভারের আশুলিয়ায় দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়া এক ময়লা ব্যবসায়ী, তার পরিবারের সদস্য ও কর্মচারীদের মারধর, স্ত্রীকে শ্লীলতাহানী, নগদ টাকা ও স্বর্নালঙ্কার লুট করাসহ প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদুল হক সময়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি জানিয়ে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা বলে জানিয়েছেন ময়লা ব্যবসায়ী বাবর আলী।

সময় ও তার বাহিনীর হামলায় আহতরা হলো সিরাজঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার বাসুরিয়া গ্রামের মৃত হোসেন মন্ডলের ছেলে ময়লা ব্যবসায়ী বাবর আলী (৪৮) তার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৪), হৃদয় (১৮), স্ত্রী রেনু বেগম (৩৮), কর্মচারী কালাম (৩০)।

হামলার শিকার ময়লা ব্যবসায়ী বাবর আলীর অভিযোগ, আমি গরিব মানুষ কয়েকটি গ্রামে নিজে পরিবারের লোকজন এবং কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে দুটি গাড়ি দিয়ে বাসাবাড়ির ময়লা পরিস্কার করি। এ থেকে যে টাকা আয় হয় তা কর্মচারীদের বেতন, ময়লা ফেলার স্থানের জন্য টাকা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাই। ছাত্রলীগ নেতা সময়, তাসকিন মুন্না, টুটুলসহ তাদের গ্রæপের সদস্যরা আমার কাছ থেকে জোর করে প্রতিমাসে ২০ টাকা চাঁদা নিতো। এখন হঠাৎ করে সেই চাঁদা বাড়িয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করছে। কিন্তু এতো টাকা আমি কোথা থেকে দিবে বলায় আমাকে ও পরিবারের লোকজনসহ আমার কর্মচারীদের মারধর করেছে। আমার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে সাথে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও স্বর্নালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় এবং দাবিকৃত চাঁদা না দিলে প্রানণাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর আগেও আরও দুইবার আমাদের মারধর করেছে ওরা। এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলেও তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোটভাই জাবি’র সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুবর লোক হওয়ায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা।

সরেজমিনে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পাশ্ববর্তী আমবাগান, পানধোয়া, সেনওয়ালিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় ডিশ, ইন্টারনেট ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল হক সময় ও তার সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী মোঃ তাসকিন খান। এছাড়া সময়ের বড়ভাই নাহিদুল হক জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মাওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী।

অভিযুক্ত জাহিদুল হক সময় আশুলিয়া থানাধীন সেনওয়ালিয়া গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে জাবি’র বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুবর নাম ভাঙিয়ে বড় ভাই নাহিদুল হক, ও মাদক ব্যবসায়ী তাসকিনসহ একটি গ্রুপ বানিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও শ্লীলতাহানিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যুবর শেলটারে জাবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার সকল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন সময় ও তাসকিন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মারধর করতেন, প্রাণনাশের হুমকিও দিতেন। ক্ষমতা ও দলীয় প্রভাবের ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়না। তবে সম্প্রতি আশেপাশের এলাকায় ‘ময়লা অপসারণ’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে সময় ও তাসকিনের অপকর্ম সবার সামনে আসছে।

এর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মোঃ মনসুর আলী পানধোয়া এলাকায় মাদক বেচাকেনা বন্ধ করতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা ও তাসকিন গ্যাং প্রকাশ্যে ওই শিক্ষকের উপর গুলি চালায়। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ৬ আগস্ট আশুলিয়া থানায় একটি মামলা (নং-২২) দায়ের করেন ওই শিক্ষক।

তার আগে সেনওয়ালিয়া গ্রামের ইটবালু ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন চৌধুরীর কাছে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন সময় ও তাসকিন। পরে তকে মারধর করে সঙ্গে থাকা এক লক্ষ ২০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এঘটনায় ২০২২ সালের ৬ জুন ভুক্তভোগীর স্ত্রী আফরোজা চৌধুরী আশুলিয়া থানায় একটি মামলা (নং ১০১) দায়ের করেন।

এছাড়াও সময়ের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ইসলামনগর এলাকার রহিম নামে এক ব্যক্তির সম্পত্তি জোরপূর্বক অন্যদের লিখে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সময় ও তার সহযোগীরা রহিমের কাছ থেকেও এসময় এক লাখ টাকা আদায় করে। সময়ের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করাসহ তার সহযোগী তাসকিনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ফেসসিডিলসহ কয়েকবার আটক হওয়ার পরও জামিনে বের হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠায় তাসকিন, সময় এবং জয়ের ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না।

অভিযোগের বিষয়ে জাহিদুল হক সময় বলেন, ‘যেদিন বাবুর ছেলে হেলালকে চাপাতি দিয়ে কোপ দেওয়া হয়, সেদিন ভোরেই আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গেছিলাম। যতদুর শুনেছি, ময়লা অপসারণকারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে। আমি রাজনীতি করি বলেই তারা ষড়যন্ত্র করে আমার নাম দিয়েছে।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জোহাব আলী বলেন, মারধর ও চাঁদা দাবির ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।