বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। বুধবার ওই এলাকার অণ্যরকম দিন। মাছ, মিষ্টি দিয়ে জামাইকে আমন্ত্রন জানানোর রেওয়াজ বহু দিনের পুারানো। মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে যাবে জামাই। যার যে রকম সাধ্য সে সেই মাছ নিয়ে যাবে।
মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত এ মেলাকে ঘিরে শতাধিক গ্রামজুড়ে চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ উৎসব। এক দিনের মেলাকে ঘিরে গাবতলী উপজেলাসহ আশপাশের ৫টি উপজেলায় উৎসবের আমেজ। দিনব্যাপি পোড়াদহ মেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে মাছের মেলায় লাখো মানুষের পদচারনা ছিল।
জানা গেছে, সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার গাবতলীর ইছামতির তীরে পোড়াদহ মেলা বসে। প্রায় ৩’শ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এ রীতি। গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আসে মেয়ে-মেয়ে জামাইসহ স্বজনরা। দিনব্যাপি এ মেলায় জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশেপাশের জেলা থেকে প্রায় লাখো মানুষ আসে।
মেলায় ৪০ কেজি ওজনের সবচেয়ে বড় সাইজের পাখি মাছ কক্সবাজার থেকে এনেছেন টাঙ্গাইলের শরীফ তালুকদার। তিনি প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। আব্দুল বাছেদ ২৫ কেজি ওজনের ব্লাক কার্প মাছের দাম চেয়েছেন প্রতিকেজি ৯৫০ টাকা। এছাড়া যথারীতি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, বিগ হেড, ব্লাড কার্প, আইড়, সিলভার কার্প ও কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে। আকার ও ওজনভেদে কাতল ৪০০ থেকে ৮৫০টাকা, ব্রিগহেড ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভার কার্প ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা, চিতল ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গ্লাস কার্প ৩৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। পাঙ্গাস ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা, ব্লাড কার্প ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং আইড় মাছ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় শিশুদের জন্য খেলাধূলার সামগ্রী ছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের খাবারের দোকান। এছাড়াও প্রসাধনী সামগ্রীর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানও রয়েছে। এবারো ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৭’শ টাকা কেজি দরে। মাছ আকৃতির মিষ্টিসহ বিভিন্ন আকারের মিষ্টি ছিল শতাধিক দোকানে।
রাজশাহী থেকে আসা ময়নুল ইসলাম জানান, তিনি মাছ কিনতেই এখানে এসেছেন। বড় বড় মাছ দেখে তিনি আনন্দিত। মেলার দর্শনার্থী করিম হৃদয় জানান, বাজারে এতো বড় মাছ দেখা যায় না তাই মেলায় এসেছি।
স্কুল শিক্ষার্থী আল হেলাল বলেন, এই প্রথম পোড়াদহের মেলায় এসেছি। এতো মাছ আগে কখনও দেখিনি। মেলা ঘুরে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবো।
এদিকে মেলায় ২’শতাধিক মাছের দোকানসহ অন্যান্য আসবাবপত্র, মাংস, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি উঠেছিল দোকানগুলোতে।
মেলার আয়োজক ও গাবতলীর মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, এ মেলাটি ঐতিহ্যবাহী, মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা উৎসবে মেতে উঠে।
এ/এসআর