মায়ানমার-বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এবার বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে জ্বালানি তেল। যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকায় দেশটিতে চরম জ্বালানি তেল সংকটে ভুগছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক আমদানিকারকদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দেশটিতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পাচারের নকশা এঁকেছে। বিনিময়ে পাচ্ছে সমমূল্যের ইয়াবা কিংবা চলনশীল অন্য কোনো মাদক দ্রব্য। আর এই ভয়ঙ্কর তেল পাচারকাণ্ডে জড়িত রয়েছে একাধিক জনপ্রতিনিধি, চিহ্নিত মাদক কারবারি এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্তাব্যক্তি। ফলে জ্বালানি তেল পাচার কাণ্ড দিনের পর দিন আরও বেড়েই চলছে এবং উৎসাহ পাচ্ছে।
জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর (রবিবার) টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের খুরেরমুখ এলাকা থেকে রাত ১০টার দিকে এক অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৮শ’ লিটার জ্বালানি তেল অকটেন স্থানীয় শামসু মাঝির বাড়ির পাশ থেকে উদ্ধার করে বিজিবি। এই তেলগুলো প্রতি জারে ৭০ লিটার করে ভরা। এধরণের ৪০টি জার ভর্তি অকটেন মায়ানমারে পাচারের জন্য সংগ্রহ করে রেখেছিলো পাচারকারী সিন্ডিকেট। খবর পেয়ে টেকনাফ বিজিবি এসব তেল উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টেকনাফ বিজিবি উদ্ধারকৃত জ্বালানি তেল নিকটস্থ থানায় হস্তান্তর করেনি। সাবরাং খোরের মুখ বিজিবির চেক পোস্টের হাবিলদার মুজিবুর রহমানের বরাত এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।
তিনি আরও জানান- পাচারের জন্য প্রস্তুতকৃত উক্ত তেল উদ্ধারে ব্যাটালিয়ন থেকে এক আভিযানিক দল এসেছিলো। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও অপরাপর লোকজন উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের সামনেই জব্দ তালিকা করে উদ্ধারকৃত জ্বালানি তেল নিয়ে যায় আভিযানিক দলটি। তিনি নিজেও ওই আভিযানিক দলকে সহযোগিতা করেন।
এব্যাপারে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি এধরণের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানেন না বলেও দাবী করেন প্রতিবেদকের কাছে।
এদিকে এক অনুসন্ধানে জানা যায়- সাবরাংয়ের সীমান্ত দিয়ে মায়ানমারে জ্বালানি তেল পাচারে জড়িত সিন্ডিকেটটি স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিমের নেতৃত্বে চলছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। তার সিন্ডিকেটের সাথে আরও কাজ করছে- দোকানদার মৃত লাল মোহাম্মদের পুত্র নুরুল আমিন প্রকাশ ভূট্টো, মৃত সালামের পুত্র শামসুল আলম মাঝি, মৃত নুর আহমদের পুত্র বাইট্টা মার্কিন ও মুসলিম এবং মোহাম্মদের পুত্র আমীর হোসেন।
এদের মধ্যে সেলিম মেম্বারের রয়েছে ৬টি নৌকা। এসব নৌকা দিয়ে জ্বালানি তেলগুলো মায়ানমারে পাচার করা হয়। আর অবৈধ জ্বালানী তেলের দোকানদার নুরুল আমিনের রয়েছে সাগর তীরবর্তী একটি দোকান। ওই দোকান থেকেই মাছ ধরার ট্রলারে জ্বালানি তেল সরবরাহের আড়ালে মায়ানমারে তেল পাচার করে থাকে। দালাল মার্কিনের ভাই মুসলিম এই সিন্ডিকেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি পাচারের জন্য প্রস্তুতকৃত জ্বালানি তেল পাচারের পূর্ব মুহুর্তে পর্যন্ত পাহারা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বিজিবি কিংবা প্রশাসনের প্রবেশ বা চলাচলের পথে মুসলিমের নেতৃত্বে একটি দল উৎ পেতে বসে থাকেন। প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেলে সিন্ডিকেটের অপরাপর সদস্যদের সতর্ক করে দেন তিনি। এছাড়াও ফতে আলীয়া পাড়া ঘাট এলাকার ঝোপঝাড় সম্বলিত জায়গায় তেল মজুদ করে রেখে সুযোগ বুঝে পাচার করে বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সেলিমের মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্ত তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও অভিযুক্ত অপর সদস্য নুরুল আমিন ভূট্টোর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অবগত আছেন বলে স্বীকার করেন। তবে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তিনি এক প্রকারের স্বীকার করে নিয়ে আরও খতিয়ে দেখার জন্য বলেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণির সাথে কথা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি জ্বালানি তেল পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জড়িতদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে ১৭ ডিসেম্বর বিজিবি কর্তৃক জ্বালানি তেল উদ্ধারের ঘটনায় এখনও কেউ মামলা দায়ের করেনি। এর আগে পুলিশের কাছে আসা তথ্যের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে হাজার খানেক লিটার জ্বালানি তেল সহ একজনকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।
এনপি