শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপি চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের কৃষক সাইদুর কাজী। এছাড়া শীতকালীন সবজি লাউ, বরবটি ও মূলা চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি।
এ বছর শীত মৌসুমে ফুলকপির চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক সাইদুর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাইব্রিড ফুলকপি বীজ হোয়াইট মার্বেল জাতের ফুলকপি চাষে তিনি কোনো ক্ষতিকর কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। জৈব্য বালাইনাশক ও কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করেছেন।
কম সময়ে, অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে অধিক মুনাফার আশা নিয়ে এ কপি চাষ করে তিনি এখন সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। এ জাতের ফুলকপি বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও ভারো পাচ্ছেন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি পাঁচ০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে, সাইদুরের ফুলকপি চাষে সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষকরাই আগামীতে ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তারা জানান ধান, গম, ভুট্টা ও আলুর চেয়ে ফুলকপি চাষে সময়, খরচ ও শ্রম কম লাগে। তাই অন্যান্য ফসলের বদলে ফুলকপি চাষ করবেন বলে জানান কৃষকরা।
সরেজমিনে পবা উপজেলার টিকরীপাড়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে, সফল চাষি সাইদুর পাঁচ বিঘা জমিতে বর্তমানে ফুলকপির রাজ্যে পরিণত করেছেন। একেকটি ফুলকপির ওজন ১ থেকে ২ কেজি। নিজের ক্ষেতের ফুলকপি মনোযোগ দিয়ে সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
সাইদুর কাজী জানান, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ফুলকপির বীজ হোয়াইট মার্বেল জাতের ফুলকপির চারা রোপণ করেন। এই ফুলকপি চাষে তিনি কোন ক্ষতিকর কীটনাশক বা রাসায়নিক সার না দিয়ে জৈব্য বালাইনাশক এবং কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করেছেন। অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে রোপণের ৭০ থেকে ৭পাঁচ দিনের মধ্যেই এ ফুলকপি বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও ঝামেলা হচ্ছে না। তার পাঁচ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার পিচ কপি রয়েছে।
পাইকারি দরে এই পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন। আরও ১৫ হাজার পিস ফুলকপি বিক্রি করা যাবে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এগুলো সব বিক্রি হয়ে যাবে। তার এ ফুলকপির উৎপাদন খরচ পড়েছে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন, সকল খরচ বাদ দিয়ে তার মুনাফা হবে প্রায় ২ লাখ টাকা বলে জানান ওই চাষি।
পবা উপজেলার পুঠিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক মামুন ও সহিদুল জানান- ধান, গম, আলু ও ভুট্টার চেয়ে ফুলকপি চাষে খরচ ও শ্রম দুটোই কম। এসব ফসল চাষে খরচের পাশাপাশি রোগ বালাইয়ের আক্রমণের আশঙ্কাও কম। তাই অন্যান্য ফসলের বদলে আগামীতে ফুলকপি চাষে করবেন বলে জানান তারা। সাইদুর কাজী ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেরেছেন। তাই অন্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি শীতকালীন সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এবার শীতকালীন সবজি ফুলকপি ৯৬১ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এবং উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে।
তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই অঞ্চলের মানুষ আধুনিক সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। চাষিরা শীতকালীন ফুলকপি চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছেন। তারা ফুলকপি চাষ করে দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাচ্ছেন। আগামী মৌসুমে ফুলকপির চাষ আরো বাড়বে বলে জানানা তিনি।
এসআর