ঢাকাSaturday , 27 July 2024
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চিরিরবন্দরে যুবতীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, জরুরী সেবার ফোনে উদ্ধার

বাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ১৬, ২০২৩ ৪:৫৮ অপরাহ্ণ । ১৫০ জন
link Copied

চিরিরবন্দরে যুবতীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জরুরী সেবার নম্বরে ফোনে উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টা হতে রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলা শহরের তেলীপুকুর এলাকায় নির্মানাধীন একটি ভবনের পিছনে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ধর্ষনের শিকার ওই মেয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং ছেলেটি (প্রেমিক) চিরিরবন্দর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনাটি চিরিরবন্দরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার মাগুড়া এলাকার জনৈক মাসুদ রানার (২৪) সাথে ওই যুবতীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সূত্র ধরে ওই যুবক প্রেমিকার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। যুবকটি একাই আসায় পরিবার তাৎক্ষণিক বিয়ের সিদ্ধান্তে রাজী না হলে রাত সাড়ে ৯ টার পর ওই যুবক ও ওই যুবতী এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে পঞ্চগড় উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রেল স্টেশনে ট্রেন না পেয়ে তারা উপজেলার ঘুঘুরাতলী মোড়ে গিয়ে সড়ক পথে রওয়ানার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এসময় তাদেরকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলের কথা বলে ও বিয়ে দেওয়ার কথা বলে ফোন কেড়ে নিয়ে ওই নেতার এক আত্মীয়ের নির্মাণাধীন পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। রাত আড়াইটায় ফোন ফেরত দিলে ৯৯৯ এ ফোন করলে তাদের ও ওই যুবতীকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ এবং রাতেই দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসাধীন ওই যুবতী জানান, মাসুদ রানার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত মঙ্গলবার সকালে মাসুদ রানা পঞ্চগড় থেকে চিরিরবন্দরে তাদের বাসায় আসে। মা-বাবার কাছে বিয়ের কথা জানায়। কিন্তু মেয়ের পরিবার এ বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় রাত সাড়ে নয়টায় মাসুদের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে চিরিরবন্দর রেলস্টেশনে আসে। পঞ্চগড় আসার কোন ট্রেন না পাওয়ায় হাঁটাপথে উপজেলার ঘুঘরাতলী এলাকায় বটগাছের নিচে বসে ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। স্টেশন থেকে দুটি ছেলে তাদের অনুসরন করে পিছু নেয়। রাত ১০টায় পিছু নেওয়া ছেলে দুটি ঘুঘরাতলীতে এসে তাদের গন্তব্যের কথা জানতে চায়। ওই দুইজন ছেলের মধ্যে একজন হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের ছেলে নুর আলমের গাড়ির চালকের ছোট ভাই মোবিন (২০)। ঘটনাস্থলে তাদের সাথে যোগ হয় আরও তিনজন (মাস্ক পড়া)। সব কথা শুনে মোবিন তাদের বলেন, ‘তোমরা পালিয়ে যাচ্ছো কেন? তোমরা যদি বিয়ে করো আমরা তোমাদেরকে বিয়ে দেব। এখানে আমাদের সভাপতির ছেলে আছে, আমরা বিষয়টা ওনাকে জানাইছি। তোমরা চলো আমাদের সাথে।’

জবাবে ওই যুবতী তাদের বলেন, ‘ভাইয়া আমরাতো বিয়ে ম্যানেজ করেই ফেলছি, আমরা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি। আপনারাতো আইনের লোক না। আমাদেরকে কি হেল্প করবেন? একথা শুনে তাদেরকে মারধর শুরু করে, পরে একটা ভ্যানে জোরপূর্বক তুলে নেন এবং মুঠোফোন কেড়ে নেন। পরে তাদেরকে এলএসডি সংলগ্ন একটি নির্মানধীন ভবন (নুর আলমের আত্মীয়ের বিল্ডিং) এ নিয়ে যান। সেখানে উভয়কে মারধর শুরু করে মাসুদকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ধাক্কা দিলে সে ধানক্ষেতে পড়ে যায়। তার পা ভেঙ্গে যায়। এ সময় সকলে মিলে ওই অসুস্থ্য অবস্থায়ও ধানক্ষেতে পালাক্রমে ধর্ষন করে। মোমিনকে দেখেছি। বাকিরা মাস্ক পড়া ছিলো। নুর আলমের কথা বলে আমাকে নিয়ে গেছে। ফোনে কাকে যেন বলতেছিলো ভাই আপনি আসেন, আমরা নিয়ে আসছি, কাজ হবে। পরে পাশের একটি ধানক্ষেতে শুইয়ে রেখে তার ফোনটি দিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বাড়ি চলে যেতে বলেন। মাসুদ রানা জরুরী সেবায় ৯৯৯ এ ফোন দেন। পুলিশ রাত আড়াইটায় ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বজলুর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের বোন সালমা আক্তার বাদি হয়ে বুধবার রাত পৌনে দশটায় চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৬। পুলিশ ঘটনার সাথে যুক্তদের শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

অপরদিকে মামলটি ও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও বাদিকে মামলাটি তুলে নিয়ে আপোষ মিমাংসার জন্য অব্যাহত হুমকী দিচ্ছে। এ ঘটনায় বাদি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।

এমইউএ/এসআর