‘একতরফা পাতানো’ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের ‘জনগনের আদালতে’ বিচার করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশ-জাতি ও আন্তর্জাতিক মহলের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রহসনের নির্বাচন করার যে জেদ অব্যাহত রাখছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠি। জনরোষ এবং আন্তর্জাতিক মহল সবদিক থেকে আজকে যে এই সরকারের বিষয়ে যে ওয়াকিবহাল এবং মানুষের জনরোষ যে কত তীব্রতর হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে কত বিরুপ এই পাতানো নির্বাচনের জন্য। তারা মনে করছেন যে, আমরা সব কিছু মিলিয়েই বৈতরণী পার হয়ে যাবো”
‘আমরা বলতে চাই, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং দালালরা…এরা কেউ কিন্তু ছাড় পাবেন না। ‘জনগনের আদালত গঠিত হচ্ছে এবং এই আদালতে তাদের প্রত্যেকটি অপকর্মের জবাব দিতে হবে।”
রিজভী বলেন, ‘সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে কি হবে, বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে… এর কোনো খেলায় তারা রাখতে চান না, রাখছেন না। আজকে গার্মেন্টস শিল্প ধবংসের দ্বার প্রান্তে। শেখ হাসিনা নির্বিকার। এরওপর যদি গার্মেন্টেস পণ্য রপ্তানির ওপরে স্যাংশন আসে…কত মানুষ যে মানুষ যে বেকার হবে, কত নারী যে বেকার হবে…. কি পরিমান এই ছোট্ট একটি ভূখন্ডের এতো মানুষ ১৮০ মিলিয়ন মানুষ যাদের কর্মসংস্থান যদি না থাকে, গার্মেন্টস শিল্পের ওপর যদি আঘাত আসে তাহলে কি পরিণতি হবে শেখ হাসিনা সেটা ভাবছেন না।”
‘কিন্তু তিনি(শেখ হাসিনা) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে একটা ধবংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি দেশ চান না, উনি দেশের মানুষ চান, দেশের অর্থনীতি মজবুত হোক সেটা তিনি চান না। তার দরকার হচ্ছে অমল-ধবল । আর সেই কারণেই খেল-তামাশার নির্বাচন করার জন্য তিনি মরিয়া। আর এটা করতে গিয়ে এদেশকে কি পরিমান খেসারত দিতে হচ্ছে এবং হবে তার কোনো ঠিকানা নেই।”
‘শীর্ষ নেতাদের বন্দি সাজানো নির্বাচনে’
সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে রিজভী বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বন্দি রেখেছেন কিসের কারণে? একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করার কারণে শেখ হাসিনা আপনি করেছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যিনি সবচাইতে আপোষহীন জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করেছেন কিসের জন্য? একতরফা নির্বাচন করার জন্য, পথের কাঁটা দূর করার জন্যে, নির্ভিগ্নে আপনার অপশাসন-অপকীর্তি-দূর্নীতি-অনাচার যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্যে।”
‘আর এটার জন্য কথা বললে সেটা হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। চক্রান্তকারীরা চক্রান্তের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটাকে মনে করে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা সেটাই মনে করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব মন্ত্রী, তার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী এটা তো চক্রান্তের সফল, জনগনকে প্রতারণার ফল এবং জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করার ফল হচ্ছে আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আর ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মন্ত্রিত্ব করছেন।”
গত ১৫ বছর যাবত সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নিরুদ্দেশ করে দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে’ বলে অভিযোগও করেন তিনি।
‘অবরোধ সফল করুন’
রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন চলছে। ৪৮ ঘন্টার অবরোধ শুরু হবে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে, চলবে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। এই অবরোধ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন।”
‘সকল জনগন এই অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা জনগনের সমর্থনে বিশ্বাস করি, আমরা জনগনের শক্তিতে বিশ্বাসী। আমাদের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে জনগন। আমরা বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভর করি না, একে বকা, ওকে জকা এগুলো করি না। আমরা জনগনের শক্তির ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের দাবিগুলোর জন্য এই আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সকলকে আগামী ৪৮ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘আর জনগন যার পক্ষে থাকে, জনশক্তি যার সাথে থাকে তারা কোনোদিন পরাজিত হয় না।”
‘হয়ত সাময়িকভাবে আমরা উতপীড়িত, আমরা নির্যাতিত, আমরা নিপীড়িত। কিন্তু নিপীড়ন নির্যাতনের সমস্ত আঘাত একদিন প্রতিঘাত হিসেবে এই অত্যাচারি শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবে, প্র্রত্যাঘাত করবে এবং গণতন্ত্রের বিজয় হবে।”
এসআর