আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা জ্বালাপোড়া করে, রেল লাইনের স্লিপার তুলে ফেলে, এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল। পরাজিত শক্তির দোসর। এদের না বলুন।
তিনি বলেন, রেল লাইন থেকে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করবে, এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র তিন বছর সাত মাস সময় পান। এর মধ্যেই দেশটাকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি জাতিসংঘ কর্তৃক আদায় করেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নতিটা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীরা ভাবতেও পারেনি। যারা বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, এটা তো বটমলেস বাস্কেট হবে, তারা এই উন্নয়নটাকে মেনে নিতে পারেনি। একটা দেশ এত দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে, প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপর উঠতে পারে, এটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। চক্রান্ত করে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, আজকে মানুষ বিদেশে গেলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পায়। আর এই সম্মানটা দিতে পারে না আমাদের দেশের কিছু কুলাঙ্গার। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর দোসর যারা ছিল, এরাই তাদের প্রেতাত্মা হয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে হত্যা করে যাচ্ছে। হত্যার পরিকল্পনা করছে।
জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে বাস আছে, রেললাইন আছে, যেখানে এরকম (রেলপথ তুলে ফেলা) ঘটনা ঘটবে, সাথে সাথে জনগণ যদি মাঠে নামে এরা হালে পানি পাবে না। এরা ধ্বংস করতে পারে, এরা মানুষের জন্য সৃষ্টিকরতে পারে না। এরা মানুষকে খুন করতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবনের শান্তি নিরাপত্তা দিতে পারে না। এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষের জীবনটা উন্নত করতে পারে না। কাজে তাদের কাছ থেকে সাবধান। আর কোথাও যদি এই ধরনের রেলের স্লিপ তুলে ফেলে, আগুন দেয়, যখনই করতে যাবে সরাসরি তাদের ধরতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রেল লাইন থেকে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করবে, এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যারা জ্বালাপোড়া করে, রেল লাইনের স্লিপার তুলে ফেলে, এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল। পরাজিত শক্তির দোসর। এদের না বলুন। এদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই। খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিবাজদের বাংলাদেশে কোনো স্থান নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে, তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে। শান্তিতে বাস করবে, উন্নত জীবন পাবে— সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।
নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা। শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর পালন করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এবারও যথযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করা হচ্ছে।
এসআর