ঢাকাSaturday , 11 May 2024
  • অন্যান্য

বিএনপিকে নির্বাচনে এসে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ২৩, ২০২৩ ৬:৩২ অপরাহ্ণ । ১১০ জন
link Copied

বিএনপিকে নির্বাচনে এসে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে আসুন, কার কত দৌড় আমরা দেখি। জনগণ কাকে চায়, সেটা আমরা যাচাই করে দেখি। যারা এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে, তাদেরও বলব- নির্বাচনে আসুন। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের শক্তি দেশের জনগণ। কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে পরিণতি ভালো হবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আন্দোলনের নামে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকে প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও তাদের হরতাল-অবরোধ বন্ধ হয়নি। এর আগে যে অবরোধ দিয়েছিল, সেটাও অব্যাহত আছে। তারপর আবারও এই অবরোধ। বিএনপি মানুষ মেরে সরকারের পতন চায়। তারা আবারও মানুষ পোড়ানো শুরু করেছে। কাজেই এই হরতাল-অবরোধ ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় দেশবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। নাহলে যারা দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, মানিলন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবারী ও অগ্নিসন্ত্রাসী- সেই সন্ত্রাসী দল বিএনপি এলে দেশকে আবারও খুবলে খাবে। দেশকে আবারও পিছিয়ে দেবে। কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা এবং উন্নয়নে নয়, নিজেদের ভাগ্য গড়ায় বিশ্বাস করে। নিজেরা অর্থসম্পদ বানাতে পারে।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোনো বড় দেশ; যে-ই তাদের (বিএনপি) সমর্থন দিক, আমার কাছে আমার বাংলাদেশটাই বড়। এর থেকে বড় আর কেউ নয়। আমি এখানে দেশের জন্য কাজ করি। কারও তাবেদারি করার জন্য নয়। কারও পদলেহন করার জন্যও নয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিনশ’ আসনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এই বৈঠক শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার কিছু পর শুরু হয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী প্রথম দিনের বৈঠকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৭২টি আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৈঠকটি মূলতবি করা হয়। শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার একইস্থানে মূলতবি বৈঠকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাকি ২২৮টি আসনের প্রার্থী মনোনয়নের কথা রয়েছেন।

সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। আসলে নির্বাচনে আসার মতো আস্থা-বিশ্বাসও তাদের নেই। আর একটা দলের মাথা কোথায়? জানি না, বিএনপি কী বাংলাদেশে একটা নেতাও পেল না? যাকে তাদের দলের চেয়ারম্যান করতে পারে! সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই আর খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় কানাডার পুলিশ এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। যারা এমন দুর্নীতিবাজ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো হামলা ঘটাতে পারে- তাদের নেতৃত্বে যে দল; কোন বিশ্বাসে তারা নির্বাচনে আসবে!

তিনি বলেন, তারপরও বলব, দল যখন আছে। আর কিছু না হোক, নির্বাচনের মনোনয়ন বিক্রি করা- এটাও তো একটা ব্যবসা তাদের! এর আগে সে ব্যবসাই তারা করেছে। হয়তো সে ব্যবসা করতে পারে। সেজন্যও নির্বাচনে আসুক, সেটাই তাদের কাছে আহ্বান জানাই।

যেসব দল ও জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে- তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটুকু বলতে পারি, এবারের নির্বাচন কেন- আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিটি নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। এবারে আমি বারবার নির্দেশও দিয়েছি, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’- এই অধিকারটা নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করব। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে, সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই আহ্বান করেছি, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে আসবে। এখানে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। কারণ আমাদের জনগণের ভোটচুরি করা লাগবে না। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের ওপর আছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সার্ভে রিপোর্টেও সেটা এসেছে।

বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় চায় দেশে গণতন্ত্র থাকুক, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করুক। আমরা সেই সুযোগটা তাদের দিয়েছি। আমরা যখন সরকারে এসেছি, আজ পর্যন্ত আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করিনি! তারা অফিসে গেছে, দল পরিচালনা করছে। যেভাবে মিটিং-মিছিল করার কথা, তারা করে যাচ্ছে। কই আমরা তো বাধা দেই না! তাহলে এই অগ্নিসন্ত্রাস আবার কেন শুরু?

তিনি বলেন, যখন বিএনপি মিছিল-মিটিং ও ভদ্রভাবে রাজনীতি করছিল- তখন তাদের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসছিল। জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও আস্তে আস্তে বাড়ছিল। আমরা সার্ভে করে প্রতি ছয় মাস পরপর সারাদেশে কার কী অবস্থান, আমরা দেখি। তখন কিন্তু তারা মানুষের সমর্থন পাচ্ছিল। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করছিল, কিন্তু এটা ঠিক জমায়েতও ভালো করছিল। কিন্তু যেই আবারও অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, পুলিশ ও মানুষ পিটিয়ে মেরেছে, মানুষের গায়ে ও বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়েছে এবং বিচারপতির বাড়ি, বিচারক ও সাংবাদিক-পুলিশ-আনসার-সাধারণ মানুষের ওপর হামলা আর পোড়াও-জ্বালাও শুরু করেছে- সেই আবারও তারা আগের জায়গায় ফিরে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জনগণের কাছে পরিচয় পেয়েছে। তারা স্বরূপে এখন বিরাজমান।

টানা তিন মেয়াদে তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটাকে ধ্বংস করার জন্য তাদের (বিএনপি) নানা প্রক্রিয়া। এখন রাজনৈতিকভাবে না পেরে অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে চাপে ফেলবে, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি) পৃথিবীর কিছু মোড়ল আছে! তারা আবার এক জায়গায় যুদ্ধ হলে, সেটা ইনভেনশন; আরেক জায়গায় যুদ্ধ হলে সেটা ইনভেনশন না। যেখানে তাদের সমর্থন আছে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। আরেক জায়গায় হলে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। এরা দুমুখো। এটা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে নস্যাৎ করার একটা চক্রান্ত।

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই দেখবেন, কেউ অগ্নিসন্ত্রাস ও বাসে-গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করছে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধরে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আমরা বলব না, আইন নিজের হাতে তুলে নিন। কিন্তু এদের ধরতে হবে এবং পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণ যখন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, ওই মুষ্ঠিমেয় সন্ত্রাসী চোরাগোপ্তা হামলা যাই করুক- সেগুলো আমরা ঠিকই তদন্ত করে ধরে ফেলব। যেখানেই ঘটনা ঘটছে, তার আশেপাশে প্রতিটি বাড়ি সার্চ করে কোথায় কারা কেন করল, কারা টাকা দিলো এবং কারা এই আগুন লাগালো- সবগুলো যাতে ধরা পড়ে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে কিন্তু যেখানে যেখানে করছে, আমরা ধরে ফেলছি এবং আমরা ধরেও ফেলব। কেউ রেহাই পাবে না।

আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করার জন্য দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সার্ভে ও রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করব। নৌকা মার্কা বাংলার জনগণকে স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কা যখন সরকারে এসেছে, তখন এদেশের মানুষের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ সব আমরা নির্মাণ করে মানুষকে একটা আধুনিক ও উন্নত জীবন দেবার পদক্ষেপ নিয়েছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ভবিষ্যতেও আমাদের এগিয়ে যাবার পালা। কাজেই নৌকা মার্কা থাকলে মানুষের জীবনে শান্তি থাকে, সমৃদ্ধি আসে এবং জীবন উন্নত হয়- এটাই বাস্তবতা। নিশ্চয়ই দেশবাসী সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, যাকে খুশি তাকে ভোট দেন, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমি দাবি করব- আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ জনগণ ও ভোটারের ইচ্ছা- তারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারেন। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’- এটাই আমাদের স্লোগান। তারপরও আমি নৌকায় ভোট চেয়ে রাখলাম। কারণ এটা আমাকে চাইতেই হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে অনেক কথা বলছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে আমার প্রশ্নে- অতীতে যেভাবে ক্ষমতা কেড়ে নির্বাচন কলুষিত করা হয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে- তখন তারা কোথায় ছিলেন? তখন তো তাদের কাছ থেকে কোনো কথা শুনিনি!

এ প্রসঙ্গে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় নির্বাচন নিয়ে প্রহসন ও ভোটচুরির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি যতবার এসেছে, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ক্ষমতা জনগণের হাতে চলে এসেছ।

২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞ করে তারা নির্বাচনে আসেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসে একটা পর্যায়ে সরে যায় এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে অপপ্রচার চালায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ একটা দৃষ্টান্তও দেখাতে পারেনি কোথায় কী অনিয়ম হয়েছে।

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বদরবারে তাদের মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেই সম্মান তারা পেয়েছে। আর এই সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। কাজেই ওই সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ, এদের ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।

আওয়ামী লীগ সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ সময় মনোনয়ন বোর্ড সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, রাশিদুল আলম, রমেশ চন্দ্র সেন এবং ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বৈঠকে যোগ দেন।

এসআর