শীতের আমেজ শুরু হতেই পিরোজপুরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসে যান দোকানিরা। বাহারি সব পিঠাপুলি নজর কাড়ছে পিঠাপ্রেমীদের।
সন্ধ্যা হলেই পিঠাপুলির দোকানগুলোতে বেচা-বিক্রির ধুম পড়ে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর থেকেই জেলার সদর উপজেলার জনবহুল অলিগলি ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে বা বসে লাইন দিয়ে পিঠা খেতে দেখা যায় অনেককেই।
শীত মৌসুমে প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর অয়োজন গ্রামবাংলার চিরচারিত রীতি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ব্যস্ততা ও পারিপার্শ্বিক সমস্যায় নিজ হাতে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন কমে গেলেও পিঠাপ্রীতি ও ভোজন কিন্তু থেমে নেই। পিঠাপ্রেমীরা এখন দোকানের পিঠার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে সেই স্বাদ মেটাচ্ছেন। আর অনেকেই এ পিঠা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চুলার অল্প আঁচে ধোঁয়া উঠছে। তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই, ভাপাসহ অন্যান্য পিঠা। আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে। দোকানে ভাপা, পাটিশাপটা, তেলের পিঠা ও চিতই পিঠা বিক্রি হলেও চিতই আর ভাপা পিঠার চাহিদাই বেশি। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষা ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও ধনিয়াপাতা ভর্তা, গুড় ও নারিকেল দেওয়া হয়।
ডিম দিয়েও বানানো হয় চিতই পিঠা। ক্রেতারা রাস্তার পাশে দোকানে বসে সেই পিঠা খাচ্ছেন। কেউবা আবার নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য।
পিরোজপুর সদর উপজেলার,সি ও অফিস এলাকা ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , বাইপাস, কৃষ্ণচূড়া মোড়, সহ জেলা শহরের দামোদরপুর পোল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে, মোড়ে, পাড়া-মহল্লায় ও অলিগলি আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মৌসুমী পিঠার দোকান।
কৃষ্ণচূড়া মোড় এলাকায় রেজিস্ট্রি অফিসের কর্নারে মা ও ছেলের একটি পিঠার দোকানে কথা হয় পিরোজপুর বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই এখানে পিঠা খেতে আসেন, সাথে করে ফ্যামিলির জন্য পিঠা নিয়ে যান।
রানীপুর বাজার সংলগ্ন ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে মৌসুমী পিঠা বিক্রেতা আমেনা বেগম বলেন, তিনি ভাপাপিঠা, চিতই পিঠা বিক্রি করেন তার এক সন্তান তার দোকানের কাজে সহায়তা করে । তাদের দোকানে ভালোই বেচা-বিক্রি হয় এবং এই টাকাতে সংসার ভালোই চলছে তাদের।
পিরোজপুর সি অফিস এলাকায় পিঠা বিক্রেতা কাউখালীর রহিম বলেন, শহরে এসে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পাওয়ার কারণ এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না তাই সন্ধ্যার পর এখানে পিঠা বিক্রি করেন । তিনি বলেন বেকার সময় না কাটিয়ে পিঠা বিক্রি করছি। এতে সব খরচ বাদে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৬শ টাকা আয় হচ্ছে তার।
এই প্রতিবেদকের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়, জেলা ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ কসমেটিক্স ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের সাথে তিনি বলেন এসব পিঠা ব্যবসায়ীরা শীতের ওই মৌসুমটাকে জমিয়ে রাখেন তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন জায়গাও নেই এবং ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কোন নীতিমালাও নাই, তবে খেয়াল রাখতে হবে সড়কে তাদের জন্য কোন অবস্থায় যানজট সৃষ্টি না হয়।