ঢাকাTuesday , 7 May 2024

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে আড়তে পেঁয়াজের দাম কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ । ৮৮ জন
link Copied

ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরের পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এক রাতের ব্যবধানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৫ টাকা কেজি থেকে লাফিয়ে ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি হতে শুরু করে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা পযন্ত বিক্রি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজও খুচরা বাজারে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে সারাদেশে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পেঁয়াজের আড়ৎ, পাইকারী বাজার এবং খুচরা বাজারে এক যোগে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সোমবার রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, নতুন দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।

ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, ৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেবার পর থেকে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে এবং অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। এক রাতের ব্যবধানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৮০ টাকা পযন্ত পাইকারীতে বাড়ানো হয়েছিল। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৫০ টাকা পযন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে আজ নতুন দেশি পেঁয়াজ শ্যামবাজার আড়তে ৮০ টাকা থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ সকাল থেকে দেশি নতুন পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাও ক্রেতা নেই। আর দুই-তিন দিন রোদ ভালো থাকলে পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা নেমে আসবে।

এদিকে সোমবারও রাজধানীর শ্যামবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শ্যামবাজারে অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী।

শ্যামবাজারে অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স বেপারী এন্টার প্রাইজ নামের একটি আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ মজুত করে রাখা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর মেসার্স নবীন এন্টার প্রাইজ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে ১৯৯৪ কেজি এবং ১৪৯ টাকা দরে ১৭৮৯ কেজি ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনেন। তবে বেপারী এন্টার প্রাইজ এসব পেঁয়াজ থেকে মাত্র দুই বস্তা বিক্রি করে বাকিগুলো আড়তের পেছনে মুজত করে রেখেছে। অতিরিক্ত মুনাফায় পেঁয়াজ বিক্রির লক্ষ্যে মজুত করার অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পরে মেসার্স নবীন এন্টার প্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর আমদানিকরা ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৩ টাকা থেকে ১০৩ টাকা দরে বিক্রি করলেও ৮ পরের দিন ৮ ডিসেম্বর এবং ৯ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়তি লাভে বিক্রি শুরু করে। এছাড়া কোথা থেকে বা কোন পাইকারের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনেছেন তার কোনো রশিদ বা ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। এই অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই সঙ্গে ৯ ডিসেম্বর বাজার মূল্য থেকে অতিরিক্ত দামে অর্থাৎ ১৪৫ টাকা এবং ১৪৯ টাকায় বেপারী এন্টার প্রাইজের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করায় অতিরিক্ত মুনাফার এক লাখ ৪৯ হাজার ৫৬১ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নবীন এন্টার প্রাইজকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে বেপারী এন্টার প্রাইজে মজুত করে রাখা পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার মণ্ডল।

অভিযানের বিষয়ে জব্বার মণ্ডল বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বেপারী এন্টার প্রাইজ ২৩৬ বস্তারও বেশি ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি না করে মজুত করে রেখেছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বিকারোক্তি দিলেন মাত্র দুই বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। কারণ হিসেবে তারা জানায়, ক্রেতা পাওয়া যায়নি। অথচ এই বাজারে এসে অনেক ক্রেতা সঠিক দামে পেঁয়াজ কিনতে না পেরে ফিরে গেছে। আমাদের তদারকি টিম এসেও এখানে ভারতীয় পেঁয়াজ পায়নি। বেপারী এন্টার প্রাইজ অবৈধভাবে আড়তের পেছনে পেঁয়াজ গুদামজাত করে রেখেছে। এটি ভোক্তা অধিকার আইনে অপরাধ। এই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাশের নবীন এন্টার প্রাইজ নামের একটি আড়তে গিয়ে দেখলাম গত ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫ টাকা থেকে ১০৩ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। ঠিক পরের দিন সকাল থেকেই একই পেঁয়াজ ১৪৯ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করেছে। অর্থাৎ রাতের ব্যবধানে ৫০ টাকারও বেশি দামে প্রতি কেজিতে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি অনৈতিক এবং আইন লঙ্ঘনের শামিল। এই অপরাধে নবীন এন্টার প্রাইজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভোক্তার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুরিকাটা পেঁয়াজ আজকে ৮০ টাকা থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বাজারে দেশিও পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমেছে। আমরা আশাবাদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা কমে যাবে। এবং দামটাও যৌক্তিক পর্যায়ে আসবে।

এসআর