জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে উদ্দেশ্যে করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেছেন, কোনো ব্যবসায়ী অন্যায় করলে প্রথমবার তাকে জরিমানা করা যাবে না। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সতর্কতামূলক কিছু জরিমানা করা যাবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহম্মদপুর সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা ব্যবসায়ীদের সামনে ভোক্তার ডিজিকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
মত বিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের (ব্যবসায়ী) আশ্বস্ত করছি, আমার মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের কোনো ব্যবসায়ী কোনোভাবে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা দিয়ে হয়রানির শিকার হবে না।
‘আমি ওনাদের (ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা) বলেছি, আপনারা যখন বাজারে যাবেন, বাজারের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নেবেন। কোনো দোকানদার যদি কোনো অন্যায় করেন, প্রথমবার তাকে নোটিশ দিয়ে বলে আসবেন, যে আপনার এই কাগজটি এভাবে রাখা উচিত ছিল। ভবিষ্যতে যেন ওই কাগজটি থাকে। দ্বিতীয়বার ওই দোকানদার যদি আবার একই কাজ করে, তখন আপনি (ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা) তাকে সচেতনতামূলক জরিমানা করবেন। এই ব্যবস্থা না থাকলে ব্যবসায়ীরা যার যার মতো করে যা ইচ্ছে তাই করবে। তখন আপনারা (ভোক্তা অধিদপ্তর) কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। প্রথমবার কাউকে জরিমানা করবেন না।’
মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়কে প্রথম যে কথাটি বলেছি, আমার সাধারণ কোনো ব্যবসায়ীকে যেন ১০ টাকা জরিমানা দিতে না হয়। আপনি (ভোক্তার ডিজি) কাউকেই প্রথমবার গিয়ে জরিমানা করতে পারবেন না। উনি কথা রেখেছেন, এজন্য ওনাকে ধন্যবাদ।
ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা (ব্যবসায়ী) যার কাছ থেকে যেই মালটা কিনেন, সেই মালটা কত তারিখে, কত দাম দিয়ে, কতখানি কিনলেন- এই কাগজটি রাখবেন। যদি আপনাদের কাছে এই কাগজটি থাকে, তাহলে ভোক্তা অধিদপ্তর ১০ পয়সা আপনাদের জরিমানা করবে না। আমরা ওই কাগজের সূত্র ধরে কোন মিল থেকে এই কাগজটি এসেছে, সেটি আমরা বাইর করবো। কোথায় দাম বাড়নো হয়েছে সেটি বাইর করবো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪টি অধিদপ্তর রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাজারে পণ্যের দাম দেখা একটি ছোট্ট কাজ। এর চেয়ে বেশি কাজ হলো পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো। এবার সেটা আমদানি করে হলেও। আমরা এই দেশে যাতে মিল-কারখানা সেজন্য তাদের প্রোটেকশন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারই এখন আমাদের খাওয়া শুরু করেছে। আমরা তাদের প্রোটেকশন দিয়েছিলাম, ২-৪ টাকা লাভ দিয়েছিলাম, যাতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে আমাদের চাল দিতে পারে। এজন্য আমরা আমদানি বন্ধ করে রেখেছি। এখন তারা যদি যথাযথ ব্যবসায়িক আচরণ না করে, প্রয়োজনে আমরা আবার আমদানির অনুমতি দেবো। তারা তখন কম্পিটিশনে টিকতে পারলে টিকবে, না পারলে নেই। যদি কেউ এককভাবে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, আমরা অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
আহসানুল ইসলাম (টিটু) আরও বলেন, কাউকে জরিমানা করে ভয় দেখিয়ে বাজারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা যায় না। যারা সৎ মানুষ তাদের সৎ সাহস আছে। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ করতে পারবেন না। তাদের ভালোবেসে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সেবায় নামাতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবো, যাতে তারা ব্যবসা করতে পারে।
ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, রমজান মাস ত্যাগের মাস। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা একটু সাশ্রয়ী হবেন। লাভ তো আপনারা ১১ মাস করেনই। একটি মাস যেন আমরা একটু উদার হই। একটু সহজে মানুষের জন্য কাজ করি। এটাকে সুযোগ হিসেবে না নেই। রমজান মাস যেন ব্যবসার সুযোগ হিসেবে না নেই। এই এক আপনি সাশ্রয়ী হলে বাকি ১১ মাস আল্লাহ আপনাকে বরকত দেবেই।
মতবিনিময় সভা শেষে কৃষি মার্কেটের পাইকারি চালের বাজার পরিদর্শনে যান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আজকে ঢাকা শহরের অন্যতম চালের পাইকারি বাজারে এলাম। তারা যাদের কাছ থেকে চাল কিনছে তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি কথা বলেছেন। আমরা উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত একটি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি। আমরা যখন উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত একটি স্মার্ট নেটওয়ার্ক করতে পারবো, তখন আর কোনো গ্যাপ থাকবে না। হঠাৎ করে ৪-৫ টাকা দাম বাড়বে না।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আজকে এখানে (কৃষি মার্কেট) চালের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনলাম, নির্বাচনের সময় আমাদের যোগাযোগটা বিচ্ছিন্ন ছিল। ওই সময় কিছু লোক একটি অব্যবস্থাপনার মধ্যে রেখে তাদের (বিক্রেতা) চাল সরবরাহ করেনি। এতে বিক্রেতাদের চালের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তারা চেষ্টা করছে বস্তা প্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেশি বিক্রি করার। আমরা হোল সেলারদের কাছে যাবো। গিয়ে সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো। যাতে তারা কেনা দামের বাইরে বেশি লাভ করতে না পারে।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি আমিন হেলালি, কনজ্যুমারর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মোহম্মদপুর সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. শহিদ উল্লাহসহ কৃষি মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসআর