মুসলিম উম্মাদের সামাজিক ঐক্য বাড়াতে পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন স্থানে সকল পেশা শ্রেণির মানুষের ইফতার আয়োজন করে থাকে। সম্প্রীতি আর মেলবন্ধনে আবদ্ধ হতে করেন ইফতারের নানা আয়োজন। তবে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পুরো রমজান মাস জুড়ে একটি মসজিদে এক সাথে প্রায় দুই / তিন শতাধিক মানুষের প্রতিদিনের ইফতারের আয়োজন খুবই ব্যতিক্রম। যা সচারাচর চোখে পড়ে না।
তবে ব্যতিক্রমী এমন ইফতার আয়োজন চোখে পড়বে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে। দীর্ঘ পাঁচটি বছর ধরে রমজান এলেই প্রতিদিন ইফতারের সময় ওই মসজিদে বসে রোজাদারদের মিলন মেলা।এই মসজিদে ইফতারি করতে চরাঞ্চল আর প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ থেকে ছুটে আসেন শত শত নানা বয়সী মুসল্লী।শ্রেণি বৈষম্য ভুলে সকল পেশার মানুষজন বসেন এক কাতারে। ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মসজিদের এক ছাদের নিচে বিনামূল্যে মুসল্লীদের ইফতারি খাওয়ান উলিপুরের পুরাতন অনন্তপুর বাজার কমিটি এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির যৌথ উদ্যোগে। এই আয়োজনকে দৃঢ় করতে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসেন দানশীল ব্যক্তিরাও। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং দূর দূরান্তের রোজাদারদের মুখে হাসি ফুটাতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে খুশি সকলেই।
সরেজমিনে দেখা যায়,আসরের নামাজের পর শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। মসজিদের মুসল্লী ও পুরাতন অনন্তপুর বাজার সমিতি কমিটির সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত হয়ে পরেন ইফতার তৈরিতে।বড় বড় পাত্রে ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।জায়নামাজে বসে সারিবদ্ধভাবে থাকা রোজাদারদের সামনে প্লেটে করে ইফতার,পানি পৌছে দিচ্ছেন সেচ্ছাসেবীরা। যোগান ভেদে থাকছে কলা, বুট, মুড়ি, পেয়াজু,শরবত, আঙুর, এবং খিচুরিসহ নানা পদের খাবার।সবাই আছে আজানের অপেক্ষায়। আজান দিলে একসাথে শুরু করেন ইফতার খাওয়া। এমন সুন্দর আয়োজন পুরো রমজান মাস জুড়ে থাকবে বলে জানান আয়োজকরা।
ইফতারি করতে আসা অনন্তপুরের ভিক্ষুক নুর আলী জানান,আমি প্রতিদিনই পুরাতন অনন্তপু বাজার জামে মসজিদে ইফতার করি। সারা দিন ভিক্ষা করে যে আয় হয় তা থেকে কেনো রকমে সংসার চলে যায়। ইফতার কিনে কীভাবে খাবো? তাই বিনামূল্যে এখানে ইফতার করতে ছুটে আসি।
হাতিয়া পাটগ্রাম থেকে আসা সবুর আলী বলেন,আমি প্রায় দিনই এখানে ইফতার করতে আসি।আমি একা নই। আমার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানদারাও এই মসজিদে ইফতার করতে আসেন।এক সাথে শতাধিক মুসল্লী ইফতার করার সুযোগ পাই।
চর হাতিয়া থেকে আসা বৃদ্ধ মোজাম্মেল বলেন, হাতিয়া হাটে আসছি। শেষ বিকেলে হাট করে বাড়ি যেতে চরের মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। তাই এখানে ইফতার খেয়ে, নামাজ আদায় করে হাটে খরচ করে বাড়ি ফিরে যাবো।
পুরাতন অনন্তপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টু বলেন, আমরা দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এমন আয়োজন করে আসছি।বাজারে অনেক অসহায় দুঃস্থ মানুষজন থাকে সামর্থ্য না থাকায় বাইরে ইফতার করতে ইতস্তত বোধ করেন।আমরা মুলত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সবার সহযোগিতায় প্রতি বছর সারা রমজান মাস ধরে ইফতারের আয়োজন করে থাকি।এটি দেখে পরের প্রজন্ম যেন এই ইফতার আয়োজনটি ধরে রাখে এই প্রত্যাশা আমাদের।
পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই মসজিদে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ইফতারির ব্যবস্থা করে আসছে আয়োজকরা।রমজান এলে ত্রিশ দিনের জন্য ইফতারের বন্দোবস্ত করা হয়। এতে সামর্থনুযায়ী অনেকে তালিকায় নাম লেখান।আবার কেউ যৌথভাবে ইফতারের আয়োজন করেন।যেদিন কারো অংশ গ্রহন থাকে না সেদিন পুরাতন অনন্তপুর বাজার বনিক সমিতির প্রচেষ্টায় ইফতার করানো হয়।মুলত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আমরা প্রত্যেক বছর রমজানে মাসব্যাপি ইফতারের আয়োজন করে থাকি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইখুল ইসলাম নয়া বলেন, পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদ এটি এই এলাকার অনেক পুরাতন মসজিদ। গত ৫ বছর ধরে রমজান মাস এলে এই মসজিদে ইফতারের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন এক সাথে দুই/ তিন শত মুসল্লী ইফতার করে থাকেন।এটি যেন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে এ জন্য সবার চেষ্টা ও সহযোগিতার প্রয়োজন।