ঢাকাসোমবার , ২৬ মে ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৫ আগস্ট বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম: ওবায়দুল কাদের

বাংলা ডেস্ক
মে ২৬, ২০২৫ ৪:৪০ অপরাহ্ণ । ৫৪ জন

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় তিনি নিজের বাসা ছেড়ে পাশের একটি বাড়ির বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এটিই ছিল তার প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বক্তব্য।

স্মৃতি রোমন্থন করে কাদের বলেন, “আমি সত্যিই ভাগ্যবান। সেদিন বেঁচে ফেরাটাই ছিল আমার ভাগ্য। আমার বাসার আশপাশে মিছিলের ঢল নামে, পরে পুরো সংসদ এলাকা ঘিরে ফেলে তারা। শুরু হয় লুটপাট। আমি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই।”

তিনি জানান, আশ্রয় নেওয়া সেই বাড়িটিও হামলার শিকার হয়। “ওরা জানত না আমি ওখানেই। আমি আর আমার স্ত্রী বাথরুমে গিয়ে লুকাই। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেখানে কাটাই। একপর্যায়ে কিছু লোক বাথরুমে ঢুকতে চায়। আমার স্ত্রী তাদের বলেন, আমি অসুস্থ। শেষমেশ দরজা খুলে দিই।”

এরপর পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। “মুখে মাস্ক, হাতে লাল ব্যাজ—এমন কয়েকজন ছেলে বাথরুমে ঢোকে। প্রথমে তারা উত্তেজিত ছিল, পরে আচরণ পাল্টে যায়। কেউ ছবি তোলে, কেউ সেলফি নেয়। কেউ বলছিল সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে, কেউ বলছিল জনতার হাতে। শেষমেশ তারা আমাকে একজন অসুস্থ ব্যক্তি হিসেবে একটি ইজিবাইকে করে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়।”

ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে ও অবস্থান

অনেকের অভিযোগ ছিল যে তিনি ছাত্রলীগকে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে কাদের বলেন, “আমি কখনও এমন নির্দেশ দিইনি। ইউটিউবে কেউ একজন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি পার্টির সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেদিন পার্টি অফিস, মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন জ্বলছিল। এমন অবস্থায় নিজেকে ও নেত্রীকে নিরাপদ রাখা কি অন্যায় ছিল? কেউ থাকলেও তাই করত।”

জনরোষ ও ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ

৫ আগস্টের ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল বলেই মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায়, “ঘটনাটা হঠাৎ মনে হলেও এর পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু, এক দফা দাবিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারেনি।”

তিনবার সাধারণ সম্পাদক থাকলেও জনগণের ক্ষোভ আগে টের না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, “মানুষ ভুল করে, আমিও করেছি। তবে আমি চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি। আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ ছিল সবার চোখের সামনে। কোনো পদ বিক্রি করিনি।”

সমালোচনা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে

নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কাদের বলেন, “সমালোচনা থাকবেই। তবে আমাদের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। দেশকে বদলে দিয়েছি আমরাই। সময় হলে ইতিহাস আমাদের বিচার করবে।”

নীরবতা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

অনেকদিন গণমাধ্যমে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেকে বলেছে আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। বাস্তবে আমি অসুস্থ ছিলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমার খোঁজ নিয়েছেন।”

দলে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি। “তিনবার সাধারণ সম্পাদক হওয়াটা সবার ভালো লাগবে—এটা ভাবা ভুল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, এখনও আছে। অনেক সময় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সেখান থেকেই জন্ম নেয়।”

সবশেষে তিনি বলেন, “৫ আগস্ট আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন। তবে ভাগ্য সহায় ছিল, তাই বেঁচে ফিরেছি। সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”