ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২২ মে ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সূতায় স্বপ্ন বুনছেন দুইভাই

বাংলা ডেস্ক
মে ২২, ২০২৫ ৭:১৭ অপরাহ্ণ । ৩৯ জন

সূতার লাঠাইয়ে স্বপ্ন বুনছেন দুইভাই। শূণ্য থেকে শুরু করে আজ ১৫টি মেশিনে তৈরি করছেন সূতার দড়ি। নানা প্রতিকূলতাও টিকে আছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা দুই ভাই। হার মানতে নারাজ তারা দুজনেই। মাদরাসা শিক্ষক বাবার কাছে আাড়াই লাখ টাকা পূজি নিয়ে ৪টি মেশিন কিনে শুরু করেন তারা। আধা-পাঁকা টিনসেড কারখানায় এখন ১৫টি মেশিন বসিয়েছেন। দুই ভাইয়ের সাথে সাথে এখন আরো ৫ জন মহিলা শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। কারখানায় সূতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে রঙ-বেরঙের রশি। পাতলা, চিকন, মাঝারী আর মোটা দড়ি তৈরি করে বাজার গুলোতে সরবরাহ করে থাকেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের রাজবল্লভ গ্রামে তিস্তা নদীর অববাহিকায় নিজ বাড়িতেই ‘নজির হোসেন দড়ি ঘর’ নামে দড়ি তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন।

নজির হোসেন ও নুর আলম দুই ভাই। ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছেন। নজির হোসেন ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করেন। বাবা নুর মুহাম্মদ মাদরাসার শিক্ষক হলেও অল্প বেতনে সংসার চালানো কঠিন ছিল। পরিবারের হাল ধরতে পড়ালেখা না করে ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের মুক্তাপুরে একটি দড়ির কারখানায় ৬ হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ নেন। ছোট ভাই নুর আলম কিছুদিন পর সেখানে একই কারখানায় মেকানিক্সের কাজ নেন। তারা দুই ভাই একই সাথে ২০ বছর চাকরি করে তেমন কোন উন্নতি না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন দড়ি তৈরির কারখানা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেশিনে সুতা দিয়ে দড়ি তৈরি হচ্ছে। আধাপাকা টিনশেড ঘরের পাকা মেঝেতে ১৫টি মেশিন বসানো হয়েছে। সেখানে নারী শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত, তদারকি করছে নজির হোসেন নিজেই। মেশিনের কোন প্রকার সমস্যা হলে ঠিকঠাক করেন নুর আলম। সেখানে বিভিন্ন রঙের পাতলা, চিকন, মাঝারি ও মোটা সাইজের দড়ি তৈরি হচ্ছে। চাকরি ছেড়ে আসা স্বপ্নবাজ দুই ভাইয়ের চোখে মুখে হতাশার ছাপ এখনো কাটেনি। প্রতি মাসে আয়ের বিপরীতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। পুঁজির স্বল্পতা ও বৈদ্যুতিক লোডশেডিং তাদের স্বনির্ভর ও স্বচ্ছলতার বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।

তাদের কারখানার তৈরি ফিতা রশি গ্রমাঞ্চলে গরু, ছাগল, ভেড়া বাঁধতে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ভ্যান, ট্রলি ও ট্রাকে মালামাল বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়।

দড়ি ক্রয় করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম, শমছেল, আব্দুল করিমসহ অনেকে জানান, এখানে ভালো মানের বিভিন্ন কোয়ালিটির দড়ি তৈরি হয়। আমার গোয়াল ঘরে পাঁচটি গরু বাধার জন্য অল্প মূল্যে দিয়ে দড়ি কিনতে এসেছি।

কারখানার শ্রমিক লাকী বেগম ও রওশন আরা জানান, আমাদের গ্রামে দড়ি তৈরির কারখানা গড়ে উঠবে কখনো ভাবতে পারি নাই। এটি তৈরি হওয়াতে বাড়িতে থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে হাজিরায় মজুরি পাচ্ছি। তাই দিয়ে দুই বছর থেকে সন্তান-সন্ততি নিয়ে সংসার চলাচ্ছি।

উদ্যোক্তা নজির হোসেন ও নুর আলম জানান, প্রথম দিকে চারটি মেশিন দিয়ে শুরু করি। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৫টি মেশিন কারখানা স্থাপন হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৬০ কেজি দড়ি উৎপাদন হচ্ছে যা তুলনামূলক অনেক কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মেশিনগুলো বিদ্যুৎ চালিত আমাদের এলাকায় নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে না দিনে কমপক্ষে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা লোডশেডিং থাকে তাই উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কেজি প্রতি দুই টাকা আয় হচ্ছে ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, তারা যোগাযোগ করলে তাদের সাথে কথা বলে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

এসআর