ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৫ মে ২০২৫
  • অন্যান্য

রূপপুর প্রকল্প বন্ধের ষড়যন্ত্র, প্রতিবাদে ঈশ্বরদীতে মানববন্ধন

বাংলা ডেস্ক
মে ১৫, ২০২৫ ৮:০১ অপরাহ্ণ । ৬৪ জন

‘দাবি আদায়ের নামে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে পাবনার ঈশ্বরদীতে ’সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের স্টেশন সড়কে ফকিরের বটতলায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিএনপিসহ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

এ সময় সমাবেশ থেকে বক্তারা রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা রক্ষা ও দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বন্ধের ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নানা কারণে রূপপুর প্রকল্প হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ অনেক বার পিছিয়ে গেছে। আবার চলতি মাসে গ্রিড সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ ও ডিসেম্বরে স্টার্টআপ হওয়ার কথা রয়েছে বলে আমরা জেনেছি। কিন্তু তার আগেই একটি চক্র ’দাবি আদায়ের’ নামে প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ প্রকল্পের জন্য ভীষণ অশুভ সংকেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এতে প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা ও প্রকল্পের কাজ ব্যহত হতে পারে।

আরও বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী রাশিয়ার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট (এএসই), সাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকিমত, টেস্ট রোসেম, ইএসকেএম, এএমটি, রুইনওয়ার্ল্ডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির রাশিয়ান কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন যে, দাবি আদায়ের নামে প্রকল্পের ভেতরে বাঙালিদের উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তারা ভীষণ নিরাপত্তাহীন অনুভব করছেন। এ প্রকল্পটি সার্বক্ষণিক আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নজরদারিতে থাকে। একারণে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তার শর্ত ভেঙে মিছিল-সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা শুধু চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজই করেননি, প্রকল্পের অগ্রগতি ও পরবর্তী ধাপের আইএইএ এর লাইসেন্স প্রাপ্তিও হুমকিতে ফেলেছেন। এ অবস্থায় রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যাহত ও বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।

আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন, সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর, বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান টুটুল, শামসুজোহা পিপ্পু, রফিকুল ইসলাম রকি, ইমরুল কায়েস সুমন, আনোয়ার হোসেন জনি, আবু সাঈদ লিটন, শামীম আরা সাথী প্রমুখ।

এ সময় বাজারের চাঁদ আলী মোড় থেকে ফকিরের বটতলা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি খন্ড খন্ড মিছিল হয়। ওই মিছিলে রূপপুর প্রকল্প নিয়ে ’ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদ জানিয়ে শ্লোগান দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পে এনপিসিবিএল কোম্পানির প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৮ এপ্রিল থেকে আন্দোলন শুরু করেন। ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন, পরদিন ৭ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর প্রকল্পে কোম্পানির অফিসে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন। এতে এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও কোম্পানির আইন মেনে চলার চিঠি দেয়। না মানায় ৮ মে কোম্পানির ১৮ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই কারণে ১৪ মে থেকে কোম্পানির ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও রূপপুর প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে “সচেতন নাগরিক সমাজ ঈশ্বরদী’র ব্যানারে বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল বুধবার সারাদিন শহরে ব্যাপক মাইকিং ও প্রচার চালানো হয়। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক, শিল্প ও বণিক সমিতি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, উন্নয়নকর্মী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ অনেকেই অংশগ্রহণ করেন।

কেএমএইচ/এসআর