চীনে হাসপাতালগুলোতে ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারির পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। যা ডিসেম্বরের শুরুতে ভাইরাসের বিধিনিষেধ শিথিল করার পর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত দ্বিতীয় বড় মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৬৮১ রোগী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শ্বাসকষ্টের কারণে মারা গেছেন এবং ১১ হাজার ৯৭৭ জন এই সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সাথে মিলিত অন্যান্য রোগে মারা গেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পরিসংখ্যানটি শুধুমাত্র হাসপাতালে রেকর্ডকৃত মৃত্যুর উল্লেখ করা হয়েছে, মোট সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে যারা বাড়িতে মারা গেছেন তাদের এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ চীন করোনার বাড়বাড়ন্তের মাঝেই করোনায় মৃতের সংখ্যা গণনায় পরিবর্তন করা হয়। চীন সরকারের এক বিবৃতি জানানো হয়েছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতার কারণে মৃত্যু হবে, তাদেরই করোনায় মৃত বলে গণ্য করা হবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছিল, নতুন সংজ্ঞাটি খুব সংকীর্ণ।
এরআগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ১২ জানুয়ারির পর্যন্ত কোভিড-সংক্রান্ত ৫৯ হাজার ৯৩৮ জন মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই বছর চীনে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়েছেন। সরকারী তথ্য অনুসারে, চীন হঠাৎ করে তার শূন্য-কোভিড নীতি বাতিল করার প্রায় এক মাস পরে ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হাসপাতালে মারা গিয়েছিল।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা এয়ারফিনিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২৩ জানুয়ারীতে প্রতিদিন মৃত্যু সর্বোচ্চ ২৫ হাজারে দাড়াবে হবে। এছাড়াও এয়ারফিনিটির বিবৃতিতে, ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ চীন জুড়ে ১৭ লাখ মৃত্যুর আশঙ্কা করছে।
এদিকে আগামী দুই বা তিন মাসের মধ্যে চীনের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে এবং দেশটির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বা ১১০ কোটিও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। চীনের একজন বিশিষ্ট সরকারী বিজ্ঞানীর বরাতে শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ উ জুনিউ বলেছেন, চলমান চন্দ্র নববর্ষের ছুটির সময়কালে মানুষের ব্যাপক চলাচল ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। কোভিড সংক্রমণের এই তরঙ্গের সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাস স্থায়ী হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে চীন। এরপরও চীন করোনা পরিস্থিতির দৈনিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু দেশটির বড় বড় হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর উপচে পড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে।
সূত্র: এএফপি
এনপি