সামনে ঈদুল আজহা। প্রতি বছরের মতো এবারও চরফ্যাশন উপজেলার গরুর খামারিদের ব্যস্ততা বেড়েছে। হাটে ভালো দাম পেতে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের গরু। নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনের জন্য দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। আর এ কাজে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর আরএমটিপি প্রকল্প। চরফ্যাসন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা কোরবানি উপলক্ষ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস, গমের ভুঁসি, চালের কুড়া, খৈল ও খেশারি খাইয়ে গরু মোটাতাজা করছেন। লাভবান হওয়ার আশা তাদের।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ি উপজেলার ২১ টি ইউনিয়নে মোট ৬৩ জন খামারি প্রকল্পের এ কাজের সাথে জরিত, যেখানে মোটাতাজা গরুর সংখ্যা ৫১০টি। এসব খামারিদের দেখাদেখি কোরবানির হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন পুরো উপজেলায় গরু পালনে ব্যস্ত হাজারো খামারি। এসব খামারে সিন্ধি, পাকিস্তানি, অস্ট্রেলিয়ানসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
শুত্রুবার চরফ্যাসন সদর উপজেলার মজিবনগর, নীলকমল, দক্ষিনচর আইচাথান এলাকার বেশ কিছু গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খামারে ৩-৪ জন লোক নিয়মিত গরু পরিচর্যা করছেন।
তবে চরফ্যাসন উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে এর চিত্র একটু আলাদা। তারা জানান, উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫৯৮ জন পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে খামারে গবাদিপশু পালন করছেন। আর এ থেকে ২০ হাজার ৫৯১টি গবাদিপশু উৎপাদিত হবে। যা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। এবারও চরফ্যাসন উপজেলা প্রশাসন অনুমদিত পৌরসভাসহ ৪ থানায় ২১ টি ইউনিয়নে স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে বসছে ৬০ টি পশুর হাট। তবে হাটগুলোতে বিশেষ তদারকি করছে ৭ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম।
আবদুল্লাহপুর এলাকার নসু মিয়ার গরুর খামার কর্মচারি মাকসুদ বলেন, এবছর কোরবানিতে গরুর চাহিদা অনেক তবে গো খাদ্যের দাম বেশি। তারপরেও আগের মতো গরুকে মোটাজাতা করণে খাদ্য দিয়ে থাকেন। দৈনিক একটি গরুর পিছনে ২০০ টাকা মতো খাদ্যে খরচ হয়। বিক্রি যোগ্য এবারের প্রতিটি গরুর মূল্য প্রায় ৮০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ২০টা দেশী ও অস্ট্রেলিয়ার জাতের গরু রয়েছে। এখনো যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৮০ লক্ষ টাকা, বিগত বছর লোকসান হওয়াতে এবারও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুঃচিন্তায় খামারি।
অন্যদিকে গরুর খামারি ইসরাত জাহান নিপা বলেন, কিছুদিন আগে ৪০ টি গরু ছিলো সব বিক্রি করে এখনো বর্তমানে ৫ টি গরু রয়েছে তার খামারে এবার কোরবানিতে ৫০ হাজার টাকার মূল্যের ৩ টি গরুর বিক্রি করবেন।
চরফ্যাসন পশুর হাটের ক্রেতা জুয়েল, মোঃ জামালসহ আরো অনেকে জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম দুই-তিন গুন বেশী চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতা মোঃ নজরুলসহ অনেকেই বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেশী থাকায় গরু লালনপালনে তাদের খরচ বেশী হয়েছে। তাই গরুর দামও বেশী।
চরফ্যাসন উপজেলা উপ-সহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রাজ আলী জানান, খামারিদের ও কৃষকদের উৎসাহ দিতে সরকারী প্রণোদনাসহ সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অফিস। অন্য দিকে বে-সরকারি প্রতিষ্টান পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) এর আরএমটিপি প্রকল্প আওতায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করতে ৬৩ জন খামারিকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। এতে করে দিন দিন গরু পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজা করতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতো। ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে পশু মোটাতাজাকরণের প্রবণতা এখন আর নেই বললেই চলে। তার পরেও চরফ্যাসনে ৭ টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম খামারে গিয়ে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করছে।
এসআর